ভাষা ও সংস্কৃতি
বিবাহ মেলা ইত্যাদিঃ
বর্ষা মওসুমে যাতায়াতে সুবিধা বলেই বিয়ের হার বেড়ে যায় । প্রায় সময়েই রঙ্গিন সাজানো লঞ্চে গান বাজিয়ে বরযাত্রী যেতে দেখা যায় । কোন বাড়ীতে বিয়ের আয়োজন শুরুর আগে অভিভাবকরা মহলার লোকদের নিয়ে প্রথমে পান চিনির বৈঠক করেন । কারপর সবাই মিলে বিয়ের আয়োজনে সহযোগিতা করেন । নৌকা লঞ্চ ছাড়া পালকীও ব্যবহৃত হয় বর কনেকে নেয়ার জন্য । শুকনা মওসুমে মাইক্রোবাস, ধনী লোকদের ক্ষেত্রে কার জীপ এসবেরও ব্যবহার আছে । বিয়ের ঠিক আগে আগে রাখী পরানোর মত একটি উৎসব হয়, তাতে বর বা কনের হাতে স্বর্ণ ও কাগজের একটি রাখী (স্থানীয় ভাষায় কাংকনা) পরানো হয় । তখন মেয়েরা এসে গাইলোগারা নামের একটি উৎসব করে । সবাই মিলে ধান ভাঙ্গে । চাল গুড়া করে এবং গীত গায় । রং খেলাও হয় । বিয়ে ছাড়াও হিন্দু ও মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মেলা হয় । মেলাকে এখানে ‘বান্নি’ বলা হয় । যেমন বেকিটেকার বান্নি, মোড়াকরি কালিবাড়ীর বান্নি, বুল্লা মাজারের মেলা, ভাদিকারা শেখ ভানুর মেলা, দয়ানন্দ আশ্রমের বার্ষিক সম্মেলন ও কীর্তন, এছাড়া বুলা, মোড়াকরি, কৃষ্ণপুর, লাখাই এসব স্থানে কীর্তন উৎসব হয় ।
নৃত্য, গীত ইত্যাতিঃ
এ অঞ্চলে বিয়ের সময় বিশেষ গীত গাওয়া হয় । বিয়ের তিন দিন আগে কনের বাড়ীতে স্থানীয় মেয়ে/সখীদের মাধ্যমে হাতে মেহেন্দী, সোনার রাখি (কাংকনা) ইত্যাদি পরানো হয় এবং সঙ্গে গীত গাওয়া হয় । উপমহাদেশের প্রখ্যাত মরমী কবি শেখ ভানুর বাড়ী এ উপজেলার ভাদিকারা গ্রামে বিধায় তাঁর জন্মস্থান এবং তার মাজারকে ঘিরে বৎসরের বিভিন্ন সময়ে তাঁর রচিত গান গীত হয় । চৈত্র মাসে বৃষ্টির জন্য গান গাওয়া হয় । স্থানীয় তরুন তরুনীরা মাথায় কুলা রেখে, কুলার উপর একটা কুনো ব্যাঙ রেখে নাঁচতে নাঁচতে বিভিন্ন বাড়ীতে যায় । বাড়ীর প্রাঙ্গনে গেলে তাদের মাথায় কুলার উপর পানি ঢালা হয় । সবাই মিলে ‘মেঘ দে পানি দে’ বলে গানের সাথে সাথে নাঁচে এবং মাটিতে গড়াগড়ি দেয় । পরে বাড়ীর মালিক চাল-ডাল দেয় । সবাই মিলে উক্ত চাল-ডাল রেঁধে সিরনি হিসেবে খায় । বাইচ হয় । বিভিন্ন গ্রামে লম্বা লম্বা নৌকা নিয়ে গীত সহকারে নৌকা বাইচের প্রতিযোগিতা হয় । এ ছাড়া হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা পার্বনে নানা রকম কীর্তনের আসর বসে । বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কীর্তন শিল্পী, বাদ্যযন্ত্র সহকারে এ সকল অনুষ্ঠানে আসেন । প্যারালাইসিস জাতীয় অসুস্থতার সময় ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে রোগী ঘিরে নাচানাচি করা হয় । নতুন পাতিলে পুকুরের পানি রেখে নতুন গামছা ভিজিয়ে নেঁচে নেঁচে রোগীকে ওঝা পানির ছিটা দেয়, তাকে ঘিরে অন্যরা ঢোল বাজায় । নবান্নের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীর প্রাঙ্গন গোবর মাটি দিয়ে লেপা হয় । আতপ চালের গুড়ি দিয়ে আলপনা আঁকা হয় । বাড়ীর মেয়েরা তখন কীর্তন গায় । নতুন ধান তোলার আগে এ ধরণের উৎসব চলে ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস